খেলাধুলা ডেস্ক মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ডান দিকে চোখ ফেরালেই নজরে আসে টিকিট অফিসের উপরে বড় বড় হরফে ‘পার্ট অব দ্য প্রাইড’ লেখাটা! আক্ষরিক অর্থে ইংলিশ ফুটবলের গৌরবময় ঐতিহ্যের অনন্য ধারক হয়ে বার্মিংহামের ট্রিনিটি রোডে দাঁড়িয়ে আছে ‘ভিলা পার্ক’! বার্মিংহামের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার খেলার মাঠ এটি। ‘ভিলা পার্ক’ এবং সবার ওপরে ‘অ্যাস্টন ভিলা ফুটবল ক্লাব’ লেখা দুটি অনেক দূর থেকেই নজরে আসবে। অনুশীলনের মাঠটি মূল মাঠ ভিলা পার্ক থেকে কয়েক মাইল দূরে।অসাধারণ ইংলিশ স্থাপত্যশৈলিতে তৈরি ভিলা পার্কের ভেতরের সৌন্দর্য্যও চোখ ধাঁধানো! খেলার মাঠে যেন সবুজের চাদর বিছানো! অমন অপূর্ব একটি মাঠ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে যে কারো।
ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম পুরনো এই ক্লাবের অন্দরমহলটা দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ড্যারেক রাসেলের প্রতি।মাঠে চোখ ধাঁধানো ফুটবলটা যদিও এখন সোনালী অতীত ভিলার । তবু ‘দ্য লায়নস’কে নিয়ে গর্বের শেষ নেই বার্মিংহামবাসীর। জনপ্রিয়তাও লাগেনি এতটুকু ভাটার টান। ফিলিপ কৌতিনিয়োর মতো তারকাকে দলে ভিড়িয়ে কোচ স্টিভেন জেরার্ডের ছোঁয়ায় নতুন করে স্বপ্নের জাল বুনছে ভিলা সমর্থকরা। শিরোপা জিতবে ভিলা-স্বপ্নটা অতদূর প্রসারিত করতে না পারলেও অন্তত শীর্ষ দশে থেকে লিগ শেষ করবে এমন প্রত্যাশা তাঁদের।আগামাীকাল বোর্নমাউথের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইংলিশ লিগের নতুন মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে অ্যাস্টন ভিলা। নতুন মৌসুম শুরুর আগে ভিলা পার্কের অফিসিয়াল বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মীরা পার করছে এখন ব্যস্ত সময়। টিকিট অফিস লাগোয়া এই স্টোরে ছোট্ট থেকে বুড়ো-সব বয়সের সমর্থকরা এসে নিয়ে যাচ্ছে মেরুণ জার্সি-ট্রাউজারসহ নানা রকমের পছন্দের জিনিস। খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন মৌসুমের প্রস্তুতি যেন সমর্থকদেরও। বিক্রয় কেন্দ্রের প্রবেশ মুখেই চোখে পড়বে ক্লাবের নতুন সেনসেশন ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিলিপ কৌতিনিয়োর ফটোস্ট্যান্ড। পাশাপাশি এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, অ্যাশলে ইয়াং, ড্যানি ইংস, ডিয়াগো কার্লোস, ডগলাস লুইসসহ সব খেলোয়াড়ের ফটোস্ট্যান্ড।
১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা। এর তের বছর পর ১৮৯৭ সাল থেকে তাদের ঠিকানা ভিলা পার্ক। ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রাচীন ক্লাবের নাম অ্যাস্টন ভিলা। ১৮৮৮ সালে ইংলিশ ফুটবল লিগ এবং ১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অ্যাস্টন ভিলা। ইংল্যান্ডের যে পাঁচটি ক্লাব ইউরোপের অভিজাত ক্লাব প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে তাদের একটিও এই অ্যাস্টান ভিলা। ১৯৮২ সালের ২৬ মে রটারডামে পিটার হুইদের গোলে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে সেবার শিরোপা উৎসব করেছিল ভিলা। সাতবার জিতেছে ইংলিশ লিগের শিরোপা। যার সর্বশেষটি তিন দশক আগে। লিগ শিরোপা ঘরে তুলতে না পারলেও বড় বড় জায়ান্টদের মাঝে মধ্যেই ভড়কে দিয়ে নিজের সোনালী ঐতিহ্যের জানায় দেয় ভিলা। কিছুদিন আগে লিভারপুলের জালেও তারা গুনে গুনে দিয়েছিল সাত গোল। অ্যান্ডি গ্যারি, ড্যাভিড প্যাট, গ্যারি শ, ট্রেভর ফোর্ড, স্যাম হার্ডি, পিটার স্মেইকেলের মতো কিংবদন্তিরা মাতিয়েছেন ভিলার বিখ্যাত মেরুণ জার্সি।ডাক নাম ‘দ্য লায়নস’! এক সময় ইংলিশ ফুটবলে সিংহের পদচারণাই ছিল ভিলার। বিখ্যাত মেরুণ জার্সিতে সোনালী ঐতিহ্য কি আবার ফিরবে ভিলা পার্কে! উত্তর দেবে সময়, তবে নতুন মৌসুমে নতুন কিছুর স্বপ্নের জাল বুনছেন ভিলার সমর্থকরা। ক্লাব জার্সি বিক্রয় কেন্দ্রে কৌতিনিয়োর ফটোস্ট্যানেডর পাশে দাঁড়িয়েই তিন বছরের বাচ্চা এবং এক বন্ধুর সঙ্গে ক্লাব কিটস কিনতে আসা পঁচিশ ছোঁয়া ভিলা সমর্থক থোমাসও গর্বিত কণ্ঠে বলছিলেন,‘ ভিলা আমাদের গর্ব। লিগ শিরোপা জিততে না পারলেও এই ক্লাবকে আমরা অনেক ভালোবাসি। বার্মিংহামের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব। কিংবদন্তি জেরার্ড ক্লাবটির কোচ। ব্রাজিলিয়ান তারকা কৌতিনিয়ো খেলবে ক্লাবটির হয়ে। শিরোপা জিততে না পারলেও সেরা দশে থেকে লিগ শেষ করবে এমন প্রত্যাশাই আমাদের। ’ জেরার্ড-কৌতিনিয়োরা কি পারবেন সমর্থকদের এই প্রত্যাশা মেটাতে!